আশ্রম-পুত্র মনোজ মুরলী

শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ারের জন্ম ও ছোট বেলাকার ৭ টি বছর কেটেছিল বিহারের রাজধানী পাটনায়। তাঁর পিতা বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী শ্রী কলামন্ডলম মুরলী পাটনায় কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি ১৯৮০ সালে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে তিনি অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ছোট্ট মনোজ মুরলী যিনি

অনেকের কাছে “নুপুর” বলে পরিচিত,

তিনি শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত পাঠ ভবনে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন।

ছোটবেলা থেকেই সুর-তাল – ছন্দের সহিত পরিচিত শ্রী ন্যায়ার রাবীন্দ্রিক

শিক্ষাদর্শে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে

তাঁর কথায় বার্তায় চিন্তায় ব্যাক্তিত্বে

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শ দেখা দিতে থাকে।

এখন আমার তো মনে হয়,

আমি দাদার মাধ্যমে ১৯৮০/ ১৯৯০ দশকের শান্তিনিকেতনকে দেখতে পাই, যেটা আমার ভারী ভালো লাগে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার পর কিছু সহজ ভাষায় তাঁর গভীর উপলব্ধির কথা বলে অথবা লিখে গেছেন।

যথা

** “প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে হয়ে এখানকার ছেলেদের মন বিকশিত হব, আবরণ ঘুচে যাবে, কল্পনায় এইরূপ দেখতে পেতাম। “

** “আমি মনে করেছিলাম,

আমার ছেলেরা প্রাণবাণ হবে, তাদের মধ্যে ঔৎসুক্য জাগরিত হবে। “

** “তারা বেশি পাশ মার্কা পেয়ে ভালো করে পাশ করবে এ লোভ ছিল না- তারা আনন্দিত হবে, প্রকৃতির শুশ্রূষায় এবং শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তায় পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত হবে এই ইচ্ছাই ছিল। ….

অল্প কয়েকটি ছেলে নিয়ে গাছের তলায় এই লক্ষ নিয়েই কাজ আরম্ভ করেছিলাম”

** ” প্রকৃতির অবাধ সঙ্গ লাভ করবার উন্মুক্ত ক্ষেত্র এখানেই ছিল, শিক্ষায় যাতে তারা আনন্দ পায়, উৎসাহ বোধ করে, সেজন্য সর্বদা চেষ্টা করেছি, ছেলেদের রামায়ণ- মহাভারত পড়ে শুনিয়েছি….

ছেলেদের জন্য নানারকম খেলা মনে মনে আবিষ্কার করেছি, একত্র হয়ে তাদের সঙ্গে অভিনয় করেছি, তাদের জন্য নাটক রচনা করেছি……

… ….

.. …

তাদের সমস্ত সময়ই পূর্ণ করে রাখবার চেষ্টা করেছি।

….

….

আমার নাটক, গান তাদের জন্যই আমার রচনা। “

২০০০ সালের পর প্রথম যখন শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ারের ইন্দ্রাণী হালদারকে দেওয়া সাক্ষাৎকার দেখলাম… তখন থেকে আজ পর্যন্ত যত সাক্ষাৎকার তাঁর দেখেছি বা তাঁর বিষয়ে যত পড়েছি ততই আমার

মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথ যেমন ছাত্র গড়তে চেয়েছিলেন, তিনি এক্কেবারে তেমনি।

২০১৩ সাল নাগাদ শ্রী ন্যায়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়

“ডাকঘর”।

বিগত এক দশক ধরে, ডাকঘরের সমস্ত সদস্যবৃন্দ রাবীন্দ্রিক চিন্তার প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

” অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী

হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃষ্টানী

পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে,

প্রেমহার হয় গাঁথা। “

অথবা

“কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা

দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা।

হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন-

শক-হুন- দল পাঠান–মোগল এক দেহে হল লীন। “

স্পষ্টতই, রবীন্দ্রনাথের লেখা এই লাইন গুলি পড়লে বোঝা যায় যে তিনি সর্বদা ধর্মের অনেক উর্দ্ধে মানবতাকে স্থান দিয়েছেন।

বর্তমানকালে ধর্মীয় বিভেদ ও পরধর্ম অসহিষ্ণুতা যেখানে আমরা সর্বত্র দেখতে পাচ্ছি সেখানে এই কথা গুলি বড়ো বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।

আশ্রম কন্যা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন আমাদের শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের চাহিদা খুব কম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদাসীন কবিতাটি পড়লে চাহিদা কম রেখে কিভাবে সুখে থাকা যায় সে সম্বন্ধে খুব সুন্দর একটি ধারণা পাওয়া যায়।

(উদাসীন কবিতার আবৃত্তি : 

                 👇 https://youtu.be/Ja8IU4oMFfE?si=unwDK6HWLiyUSyKz)

দেখনদারী ও দোকানদারীর যুগে,

বাজার অর্থ নীতি ও বিশ্বায়নের যুগে সমাজে “লোভ” কে যেখানে ” পণ্য ” করে বিক্রি করা হচ্ছে এবং তার স্বীকার হচ্ছেন বহু মানুষ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, আমার এই কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা বড় বেশি বলে মনে হয়।

বস্তুত পক্ষে,

২১ শতকের দুনিয়ায় আজ রাবীন্দ্রিক আদর্শবোধ , সমস্ত জীবন ধরে তাঁর ” সুন্দর ” কে অভিনন্দিত করার চেষ্টা,..

এ সমস্ত কিছুর জনমানসে প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনীয়তা আজ বড় বেশি বলে মনে হয়।

এমন সময় “ডাকঘর” বৃক্ষরোপণ উৎসব, বর্ষামঙ্গল,শারদোৎসব, খৃষ্টোৎসব, বসন্তোৎসব প্রভৃতি বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেভাবে রাবীন্দ্রিক আদর্শ ও চিন্তাধারার প্রচার ও প্রসার করে চলেছে সমস্ত বছর ধরে, তা সত্যিই অসাধারণ!!

ডাকঘর আয়োজিত “রবির বসন্ত” অনুষ্ঠানের ডিজিটাল প্রচার পত্র
ডাকঘর আয়োজিত ” বর্ষামঙ্গল ” অনুষ্ঠানের ডিজিটাল প্রচার পত্র
ডাকঘর আয়োজিত ” বর্ষামঙ্গল ” অনুষ্ঠানের ডিজিটাল প্রচার পত্র
কবিতা প্রতিলিপি পত্রিকায় শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ারের লেখা প্রবন্ধ
কবিতা প্রতিলিপি পত্রিকায় শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ারের লেখা প্রবন্ধ

সানন্দা পত্রিকায় শ্রীমতী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীমতী সুচিত্রা মিত্র প্রসঙ্গে শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ারের লেখা প্রবন্ধ

কেরালায় রয়্যাল এনফিল্ডের সাথে….
মায়ামনবিহারীর চায়ের দোকানের সামনে শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ার
রবীন্দ্রনাথের গানের কোন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনরত শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ার।

মঞ্চ সজ্জায় শ্রী অঞ্জিষ্ণু লাহিড়ী।

বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী ডক্টর সৌরজা ঠাকুরের

পৈত্রিক গৃহ…প্রসন্ন কুমার ঠাকুরের গৃহ

“প্রাসাদ”-এ ।

সাত সমুদ্র, ইন্দ্রধনুর সাত-রং আবার সঙ্গীতেরও সাত-সুর। এই সাত-সুরের অনায়াস বিচরণ যেমন তাঁর কন্ঠে, ঠিক তেমনি সুন্দর স্বর প্রক্ষেপণ,….মীর, গমক ইত্যাদি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে গেয়ে তিনি অগণিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সিডি ও অনলাইন ষ্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে।

এক কথায় বলতে  গেলে বলতে হয় তাঁর কন্ঠে সরস্বতী বিরাজ করেন।

রাবীন্দ্রিক আদর্শের সৌন্দর্য্যতা ও আধুনিকতার এক অপূর্ব সুন্দর মেলবন্ধন ঘটেছে তাঁর ব্যক্তিত্বে….

আর তাঁর কন্ঠে রয়েছে বাংলার যাদু !!

শ্রী মনোজ মুরলী ন্যায়ারের কন্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সদ্য প্রকাশিত গানের ইউটিউব লিঙ্ক :-

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started